মধু হলো মৌমাছির এক অপরূপ সৃষ্টি যার প্রাকৃতিক গুনাগুন মানব জীবনের উপর দারুন প্রভাব ফেলেছে। প্রাচীনকাল থেকেই জন্মকালে নবজাতক এর মুখে মধু দেওয়ার রীতি আছে। অতীতে আছে মুখে মধু দিলে শিশু মধুভাষী হয় , অপরপক্ষে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে মধুর এমন কিছু গুণ আছে যা মানব দেহের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী।

 শুধু তাই নয় মধু এত বেশি নিরাপদ মধুর এমন কিছু গুণ আছে যা মানব দেহের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী। মধু এতই  স্বাস্থ্যকর যে নবজাতক শিশুকে দেওয়া যেতে পারে।

 প্রাচীনকালেও মধুর ব্যবহার ছিল বহুল।

 মধুর প্রসঙ্গ উঠলে আমরা স্মরণ করি শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলরাম কে। কথিত আছে দেবাসুরের সমুদ্রমন্থনের সময় উঠে এসেছিলেন সুরার ঘরা হাতে দেবী বারুণী- যিনি সুরার দেবী। আর উনার নামানুসারে মদিরার নাম বারুনী ।

 গোকুল বনে গোপিনীদের সাথে ক্রীড়া কৌতুকের সময় এই বারুনি পান করে তুরীয় আনন্দে মোহিত হয়ে গেছিলেন বলরাম। শ্রীকৃষ্ণের রাজনীতির  থেকে শত হস্ত  দূরে থাকা বলরাম মধুসূরা পানে সুখী।

আজও অনেক জায়গায় অধিক শস্যের আশায় অনেকেই হাল ষষ্ঠী বা বলরাম জয়ন্তীতে দুধ,দই ,মালাই, মধু আর গোলাপজল মিশিয়ে তৈরি বারুণী নিবেদন করেন বলরাম কে। সংস্কৃত সাহিত্যে মধু থেকে সরাসরি গাজন প্রক্রিয়ায় বারুণী প্রস্তুত করার হদিস রয়েছে। মধু থেকে জাত বলে বিষ্ণু কৃষ্ণ এবং ইন্দ্রের পরিচিতি মাধব নামেও।

অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে মধুর ব্যবহার প্রচলিত আছে বহুকাল থেকেই। মিশর এবং গ্রিসে মধু ব্যবহৃত হয়, শবদেহ   সংরক্ষণের কাজে। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার  শব্ দেহ সংরক্ষণের জন্য মধু ভর্তি শবাধারে রাখার জন্য ম্যাসেডোনিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ইতিহাসে পুরান ও সাহিত্যে রয়েছে মৌমাছি ও মধুর অজস্র দৃষ্টান্ত।কথিত আছে যে প্রাচীন মিশরের সূর্যদেবতা রা, তার মাটিতে ঝরে পড়া অশ্রু বিন্দু গুলি মৌমাছিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও প্রাচীন গ্রিসের অরণ্যদেবী আর্টেমিসের প্রতীক হিসেবে মৌমাছিকে মনে করা হতো।খ্রিস্টীয় রূপকে মৌমাছিকে মনে করা হতো কুমারী মেরির দুত। ক্যাথলিক ধর্মভাবনায় মৌমাছিকে যীশুর জন্মদাত্রী  মেরি সঙ্গে একাত্মতার অনুভব করা হতো।

মৌমাছির কর্মনিষ্ঠা ও পবিত্রতা ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের আদর্শ হয়ে উঠেছে।  বেলের যুগে মৌমাছির প্রতিকি  গুরুত্ব অধুনা কালে কমে গেলেও সে অতীত মর্যাদা নিদর্শন আজও টিকে রয়েছে।তাই পোপ বেনেডিকটের রেশমের গাউনে শোভা পায় সোনালী ও রুপোলি মৌমাছি বুটিদার নকশা। সাফকে মৌমাছির বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমকে অনেক কদর করা হয়, সেখানে মৌমাছিকে পরিবারের সদস্য হিসেবেই দেখা হয়। মৌমাছি মারলে চরম শান্তির রেওয়াজ।

তবে ম্যানচেস্টারে মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমকে স্মরণীয় করে রাখতে সেখানে মৌমাছি খচিত অলংকার বা সুভেনিরের জনপ্রিয়তা আছে। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে তাই বিশ্বের প্রথম শিল্পোন্নত শহর ম্যানচেস্টারের প্রতি হিসেবে স্বীকৃত শ্রমিক মৌমাছি।। অসংখ্য কাপড়ের কল আর কারখানা সমন্বয়ে ঠিক যেন এক মৌচাকের মধু ভান্ডারের মতো সমৃদ্ধি এসেছিল এই শহরে।

খ্রিস্টীয় ২৩ হাজার বছর আগে রচিত ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থ ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদে মৌমাছি ও মধুর প্রচুর উল্লেখ করা আছে ৩০০ টি ক্ষেত্রে। (তথ্য: দীপঙ্কর দাসগুপ্ত)

সম্প্রতি পৌষ্টিক লাইফ সংস্থাটি মধুরেণ নামক অনুষ্ঠানটি আয়োজিত করেছিল ২৩শ সেপ্টেম্বর । এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব তারা শোনালেন একের পর এক মধুর কার্যক্ষমতা। উপরোক্ত বিষয়টি আমরা জেনেছি শ্রী দীপঙ্কর দাশগুপ্তের কাছ থেকে। আমরা জানতাম মধুর দ্বারা শুধুমাত্র সর্দি কাশি উপশম হয়। কিন্তু এ ধারণাকে নস্যাৎ প্রমাণ করে দিলেন এনারা। জানলে অবাক হতে হয় ডা: প্রভাস ব্যানার্জি মহাশয় মধুর অসাধারণ কার্যক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেটি হলো মধু হলো অ্যান্টিইনফ্লেমেটোরি  ক্ষমতা । অর্থাৎ মধুকে ক্ষতস্থানে ব্যবহার করা গেলে তা সেরে যায়। মধুর এইবড় গুণটি সবার কাছে প্রায় অজানাই ছিল , এটা জানতে পারলাম শ্রী স্বর্ণেন্দু সরকারের দ্বারা। মধু যে এত রকম ভাবে ব্যবহার করা যায় তা তার বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম। এছাড়াও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে সেগুলি হল মধুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ,পটাশিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ,ফসফরাস , ক্লোরিন ইত্যাদি থাকে যা আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপযোগী। 

স্বর্ণেন্দুবাবুর কথায় আমরা জানতে পারলাম যে- ডাক্তার প্রভাস ব্যানার্জি মধু দ্বারা একজন আগুনে পুরে যাওয়া ব্যক্তির ক্ষত সারিয়ে তুলেছিলেন। শুধুমাত্র মধু দিয়ে ব্যান্ডেজ করে তার ক্ষতস্থান সেরে গিয়েছিল অনেকটা। অর্থাৎ আমরা জানতে পারলাম যে, কোন পোড়া জায়গায় মধু ক্ষতস্থান  নিরাময় হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও আমরা এই আলোচনা সভা দেখে আরো অনেক মধুর বিষয়ে তথ্য জানতে পেরেছি। এবং সেই তথ্যগুলোকেমানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া উপযোগী মনে করছি।

(তথ্য: দীপঙ্কর দাসগুপ্ত)

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *